জিতাষ্টমী [jitāṣṭamī] বি. আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি-যে তিথিতে স্ত্রীলোকেরা পুত্রলাভের জন্য জিমূতবাহনের পূজা করে; জিমূতাষ্টমী। [ এটিও পড়ুন –হোলি বা দোল উৎসব এর ইতিহাস ]
জিতুআঃ (jita ashtami)
একাদশীর চাঁদের কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মায়েদের জিতা পূজা। কুড়মালি “জিতিআ” অর্থে জননী। নিরন্ন উপবাস দিয়ে মায়েরা আদিমাতা ষষ্ঠীর পূজা (জিতা ষাইঠ) করেন ঐ দিন। শশাফল কে কাঁখ (কোল) হড় (মানুষ/সন্তান) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই পূজা মাতৃত্ব অর্জনের বা সন্তানের মঙ্গল কামনার পূজা।
মা ষষ্ঠী নিছক বাংলার এক গ্রামদেবী নন, শীতলা ও মনসার মতোই তিনিও ভারতের নানা যায়গায় পূজিত হন। কেএআরও মতে তিনি হলেন প্রসুতি ও শিশুর রক্ষায়িত্রি। আবার হারাপ্পাতেও এএমওএন মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে যা দেখে মনে হয় সিন্ধু সভ্যতার আমলেও এই দেবীর পূজা হতো। এমনকি এই পূজার সাথে প্রাচীন এউরোপের লোকচারের মিল পাওয়া যায়। কেউ যাতে নিজের প্রাপ্যর বেশি না পায়, যৌথ পরিবার ধরে রাখার জন্য যা খুব জরুরী। মা ষষ্ঠীর কাহিনী এসইআই শিক্ষা দেয়। 5TH CENTURY BC- তে হিন্দু যুদ্ধদেবতা স্কন্দ ও তাঁর সহযোগী যৌধেয়র সঙ্গে ষষ্ঠীকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। 1ST CENTURY AD – 3RD CENTURY AD তে তাঁর ছটি মাথা দেখানো হয়েছে বিভিন্ন মুদ্রায় ও শাস্ত্রে। 5TH CENTURY AD তে বায়ুপুরাণে তাঁকে ৪৯ দেবীর অন্যতমা ও আর ইকেটিআই পুরাণে তাঁকে সমস্ত দেবীর মধ্যে আরাধ্যতমা বিওএলই বর্ণনা করা হয়েছে। 4TH -5TH CENTURY AD যজ্ঞবল্ক্যস্মৃতিতে তিনি স্কন্দদেবের পালিকা-মা। কিন্তু পরবর্তি কাহিনীতে তিনি তাঁর সঙ্গিনী ও স্ত্রী। ষষ্ঠীর কাহিনী পাওয়া যায় ষষ্ঠীমঙ্গল কাব্যে। সেখানে তাঁর সাথে সর্পদেবীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বিহারে সন্তান জন্মের পরে ৬ দিনের অনুষ্ঠানটিকে ছটি বলা হয়। ষষ্ঠী ওখানে ছটিমাতা। ওড়িশায় সন্তান জন্মের ৬দিন ও ২১দিনে এই দেবী পূজিত হন। উত্তর ভারতের কোথাও কোথাও বিয়ের সময় এই দেবী পূজিত হন। ষষ্ঠীকে দেখা যায় সাধারণত জননী রূপে, মার্জারবাহিনী, কোলে এক বা একাধিক শিশু। তাঁর নানা প্রতীক, মাটির কলসী, বটগাছ, বটগাছের নিচে লাল পাথর ইত্যাদি। কোথাও ষষ্ঠীকে বলা হয় অমঙ্গলের দেবী। তিনি কুপিত হলে মা ও শিশুদের দুঃখো দেন। 5TH CENTURY-র কাশ্যপ সংহিতায় ষষ্ঠীকে বলা হয়েছে জাতহরণী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে ভ্রূণ অপহরণ করেন, সন্তান জন্মের ৬দিনের মধ্যে তাকে ভক্ষণ করেন। তাই শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরে ষষ্ঠ দিনে তাঁকে পূজা করা বিধেয়। আবার শিশু জন্মের ২১ দিনে একুশ্য পালন করা হয়। সেদিন বাড়ির উত্তর পশ্চিম কোনে বটবৃক্ষমূলে সিঁদুর লিপ্ত করে, মর্কট প্রস্তরময়ী যে ষষ্ঠী বুড়ী আছেন তাঁর পূজা আবশ্যক। ছোটবেলায় খেতে গিয়ে গলায় লাগলে অনেকে বলে ওঠেন ‘ষাঠ-ষাঠ’ – মনে ষষ্ঠী দেবীর নাম করে বিপদভঞ্জন করা। বলে রাখা ভাল, প্রাচীন বঙ্গে অনার্য জাতি গোষ্ঠীর দ্বারা এই দেবী পুজিতা হতেন। অসুর নামক আদিম জাতি গোষ্ঠীও এই দেবীর পূজক ছিলেন। ধর্মমঙ্গলে আছে মায়াপুরে এই দেবীর পূজা করেছিলেন জয়ন্ত অসুর। মানভুমের লোকায়েত জীবনেও সন্তান জন্মানোর ছ’দিন পরে ষষ্ঠী ও ২১দিন পর একুশা’য় ষষ্ঠী দেবীর পূজা করা হয়। চৈতন্যভাগবত-এ দেখা যায় চৈতন্য-র জন্মের ছ’দিন পর ষষ্ঠী দেবীর পূজা করা হয়। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া পশ্চিম-মেদনীপুর-এ দুর্গা অষ্টমীর ঠিক ১৫দিন আগে জিতা-অষ্টমী হয়। এই তিথিতে জিতা-ষষ্ঠীর ব্রত ও পূজা হয়। মনে করা হয় এই জিতা পূজারই সুত্র আছে জাতহরণী বা বাংলাদেশ-র জাতাপহারিণীতে। এই দেবী অশুভ দেবী, সন্তানকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। তাই এই পূজা করা হয় ওই দেবীর প্রকোপ থেকে বাঁচতে। বাংলার মঙ্গলকাব্যের ইতিহাসে আছে বাংলাদেশে ১২মাসে ১২ রকম ষষ্ঠীর পূজা হয়। জৈষ্ঠে হয় অরণ্যষষ্ঠী যা পরিণত হয়েছে জামাই ষষ্ঠীতে। জামাতাও আসলে সন্তান, আর জামাইকে ভজন করান হয় সন্তান লাভের জন্য। সংগৃহীত