তুলসীর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে জানেন কি ? জেনে নিন

তুলসী (ইংরেজি: holy basil, বা tulasī) (বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum) একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দপুরাণে ‘লক্ষীস্বরূপা’, চর্কসংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋকবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটিও পড়ুন – প্রাণীদেহের রোগ ও রোগের স্থান সমূহ জেনে নিন

তুলসী দেবীর কৃপা ব্যতীত কৃষ্ণ প্রেম সম্ভব নয়। তাই তুলসী দেবীকে তুষ্ট করার জন্য নিয়মিত তুলসী সেবা আবশ্যক। কৃষ্ণ সেবায় একমাত্র তুলসী পত্র ব্যতীত অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না। তুলসী দেবী কৃষ্ণভক্তি লাভের প্রতীক। এছাড়াও তুলসী পত্র একটি মহাঔষধি।
সর্বৌষধি রসেনৈব পূর্বমৃত মন্থনে।
সর্বোসত্ত্বোপকারায় বিষ্ণুনা তুলসী কৃতা।।
(তথাহি স্কন্ধ পুরাণ)
পরাকালে দেবাসুর হইয়া মিলিত।
সমুদ্র মন্থনে করে উৎপন্ন অমৃত।।
জীবের মঙ্গল হেতু বিষ্ণু হিতময়।
সর্বগুণা তুলসীরে উদ্ধত করয়।।

তুলসীর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে জানেন কি
তুলসী মাহাত্ম্যঃ
ন বিপ্রসদৃশং পাত্র ন দানং সুরভে সমম্।
ন চ গঙ্গাসমং তীর্থং ন পত্রং তুলসী সমম্।।
অভিন্ন পত্রং হরিতাং হৃদ্যমঞ্জরী সংযুতাম্।
ক্ষীরোদার্ণব সম্ভুতাং তুলসী আপদোদ্ধার।।
(তথাহি স্কন্ধ পুরাণ )
ব্রাহ্মণ সমান পাত্র ধেনুতুল্য দান।
ধরাধামে তীর্থ নাহি গঙ্গার সমান।।
তেমনি পত্রের মধ্যে হয় শ্রেষ্ঠ তরা।
তুলসী নামেতে পত্র খ্যাত এই ধরা।।
যে তুলসী সমুদ্ভব ক্ষীরোদ সাগরে।
অচ্ছিন্ন হরিৎ পদ্ম কৃষ্ণ দান করে।।
ক্ষীরোদ সাগরে জন্ম তুলসী হরিৎ।
অচ্ছিন্ন মঞ্জুরী কৃষ্ণে হলে সমর্পিত।।
সকল আপদ নাশি মুক্ত হয় সেই।
ছিন্ন ভিন্ন পক্কপত্র তুলসী না দেই।।
তুলসী জাগরণ মন্ত্রঃ
উত্তিষ্টং তুলসীদেবী গাত্রোত্থানাং কুরু যথা।
অরুণোদয় প্রাতঃ প্রীচরণে প্রণমাম্যহম্।।
তুলসীর মূল লেপন মন্ত্রঃ
তুলসী নিপয়তে গঙ্গা স্থানেমেকং বারাণসী।
সেবনে পঞ্চতীর্থানি তুলসীভ্যাং নমো নমঃ।।
তুলসী ত্বং সদা ভক্তা সর্বতীর্থফলং ভবেৎ।
লেপনাৎ তব মূলঃ সর্বপাপৈ প্রমুচ্যতে।।
তন্মুলে সর্বতীর্থানি তৎপত্রে সর্বদেবতা।
তদঙ্গে সর্বপুণ্যানি কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনীং।।
তুলসী স্নান মন্ত্রঃ
গোবিন্দবল্লভাং দেবী ভক্তচৈতন্যকরণীং।
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনীং।।
তুলসী চয়ন মন্ত্রঃ
তুলস্যমৃত নামাসি সদা ত্বং কেশব প্রিয়া।
কেশবার্থে চিনোমি ত্বাং বরদা ভব শোভনে।।
তদঙ্গ সম্ভবৈ পত্রৈ পূজয়ামি যথা হরিং।
তথা কুরু পবিত্রাঙ্গি, কলৌমলবিনাশিনীম্।।
চয়ানাদ্ভব দুঃখান্তে যদ্দেবি। হৃদি বর্ততে।
তৎ ক্ষমস্ব জগন্মাতস্তুলসী! ত্বাং নমাম্যহম্।।
তুলসী অর্ঘ্য মন্ত্রঃ
শ্রিয়ঃ শ্রিয়ে শ্রিয়াবাসে নিত্যং শ্রীধরসৎকৃতে।
ভক্ত্যা দত্তং ময়া দেবী গ্রহাণার্ঘ্যঃ নমোহস্তুতে।।
গন্ধ পুষ্প দেওয়ার মন্ত্রঃ
ইদং গন্ধং তুলসীদেব্যৈ নমঃ।
এতে গন্ধপুষ্পে তুলসীদেব্যৈ নমঃ।।
পূজান্তে পাঠ্যঃ
নির্মিতা ত্বং পুরা দেবৈ রচিতা ত্বং সুরাসুরৈঃ।
তুলসী হর মে পাপং পূজাং গৃহ্ন নমোহস্তুতে।।
তুলসীর স্তুতিঃ
মহাপ্রসাদ জননী সর্বসৌভাগ্যবর্ধিনী।
আধিব্যাধিহরি নিত্যং তুলসী ত্বং নমোহস্তুতে।।
তুলসীর ধ্যানঃ
তুলসী সর্বভূতানাং মহাপাতকনাশিনী।
স্বর্গাপবর্গদে দেবী বৈষ্ণবানাং প্রিয়ে সদা।।
সত্যে সত্যবতীচৈব ত্রেতায়াং মানবী তথা।
দ্বাপরে অবতীর্ণাসি বৃন্দা ত্বং তুলসী কলৌ।।
তুলসীর প্রণামঃ
বৃন্দায়ৈ তুলসীদেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
কৃষ্ণভক্তিপদে দেবী সত্যবত্যৈ নমো নমঃ।।
যা দৃষ্টা নিখিলাঘ সঙ্খ সমমী স্পষ্টা বপুঃ পাবনী।
রোগানামভিবন্দিতা নিরসনী সিক্তান্তকত্রাসিনী।।
প্রত্যাশক্তি বিধায়িনী ভগতবঃ কৃষ্ণস্য সংরোপিতা।
ন্যস্তাতচ্চরণে বিমুক্তি ফলদাতস্যৈ তুলস্যৈ নমঃ।।
তুলসী চয়ন নিষিদ্ধ তত্ত্বঃ
অস্বাতা তুলসীং ছিত্বা যঃ পূজা কুরুতে নরঃ।
সোহপরাধা ভবেৎ সত্যং তৎসর্ব নিষ্ফলঃ ভবেৎ।।
ন স্নাতা তুলসীং ছিদ্যাং দেবার্থে পিতৃকর্মণি।
মাসান্তে পক্ষয়োবন্তে দ্বাদশ্রাং নিশি সন্ধ্যয়োঃ।।
তুলসীচ্ছেদনেব বিষ্ণোঃ শিরসি ছেদনম্।
বিনা স্নানে করে যদি তুলসী চয়ন।
তাহা দ্বারা করে যদি ভগবৎ অর্চন।
দেবকর্ম পিতৃকর্ম বিফলে তার যায়।
পদ্মপূরাণের মতে বর্ণিলাম তায়।।
দ্বাদশী, সংক্রান্তি, সন্ধ্যা, অমা পৌর্ণমাসী।
রাত্রি কালে কখন না তুলিবে তুলসী।।
যদিস্যাৎ কোন লোক করয়ে চয়ন।
বিষ্ণু শিরচ্ছেদ পাপ হইবে তখন।।
তুলসী আরতিঃ
নমো নমো তুলসী শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী
জয় রাধাকৃষ্ণের চরণ পাব এই অভিলাষী।।
যে তোমার স্মরণ লয়…. তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়
তুমি কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবনবাসী।
এই মনের অভিলাষ …. বিলাস কুঞ্জে দিও বাস
নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপ রাশি।।
এই নিবেদন ধর…. সখীর অনুগত কর
সেবা অধিকার দিয়ে কর নিজো দাসী।।
তুমি বৃন্দে নাম ধর…. অঘটন ঘটাতে পার
কৃপা করি সিদ্ধমন্ত্র দিলা পৌর্ণমাসী।।
দীন কৃষ্ণদাসে কয়…. মোর যেন এই হয়
শ্রীরাধা-গোবিন্দ প্রেমে সদা যেন ভাঁসি।।
তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্রঃ
যানি কানি চ পাপানি, ব্রহ্মহত্যাদি কানি চ।
তৎ সর্ব্বং বিলয়ং যাতি, তুলসী! তৎপ্রদক্ষিণাৎ।।(দুই বার)

Leave a Reply