ঐতিয্যমন্ডিত দিনাজপুর ১৯৯২ সালে ১লা এপ্রিল গঠিত হয়। এই জেলার ৮ টি থানা এবং ২টি মহকুমা ।একটি বালুরঘাট সদর মহকুমা, বুনিয়াদপুর মহকুমা। এই জেলা পঞ্চায়েত সমিতি ৮টি, পৌরসভা ২টি এবং গ্রামপঞ্চায়েত মোট ৬৫ টি।
এটিও পড়ুন – বাংলায় কম্পিউটার শিক্ষা – সমস্যা ও তার সমাধান
অবস্থান: দক্ষিন দিনাজপুর জেলার ভৌগলিক অবস্থান ২৫ ডিগ্রি ১০’ ৫” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রি ০’ ৩০”পুর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ২২১৯ বর্গ কিমি এই জেলা জলপাইগুড়ি বিভাগের অন্তরগত ।
ভৌগলিক অবস্থান ও সীমারেখাঃ
দক্ষিন দিনাজপুর জেলার পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র, পশ্চিমে মালদা,ও উত্তর দিনাজপুর জেলার উত্তর দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র,ও উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ ও মালদহ জেলা।এই জেলার আকৃতি অনেকটা কালপুরুষের মত।
জন সংখ্যাঃ ২০০১ সালের জনগননা অনুযায়ি দক্ষিন দিনাজপুরের মোট জন সংখ্যা ১৫,২৫০৪৭ জন,এর মধ্যে পুরুষ ৭৭০৪৪৩ জন এবং মহিলা ৭৩২২০৪ জম।জন সংখ্যার গড় ঘনত্ব ৬৬৭ জন প্রতি বর্গ মাইল। জন সংখ্যার অনুপাতে গ্রামীণ জন সংখ্যা ৮৬.৯১% এবং শহরের জনসংখ্যা ১৩.৮৯%। ৭৩.৩০% পুরুষ এবং মহিলার গড় ৬৮.৪৬%।
উষ্ণতাঃ দক্ষিন দিনাজপুর জেলার গড় তাপমাত্রা শীতকালে ৪ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীস্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩৬ডিগ্রি থেকে ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃষ্টিপাতঃ এই জেলার জলবায়ু উষ্ণ ও আদ্র।গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৮১৩.৯ মিলিমিটার।
প্রধান নদ নদী ও কৃষিকাজঃ দক্ষিন দিনাজপুর জেলার প্রধান নদ নদী- (১) আত্রাই, (২) পুর্নভবা, (৩) যমুনা, (৪) ইছামতি,(৫) ব্রামনী ও(৬)শ্রী নদী।
এই জেলার প্রধান কৃষিজ ফসল হল-ধান, পাট, শাক সব্জি, তৈলবীজ, লঙ্কা,কালাই,তরমুজ, ইক্ষু ,গম ইত্যাদি।
প্রধান শিল্পজাত দ্রব্যঃ দক্ষিন দিনাজপুর জেলার প্রধান শিল্পজাত দ্রব্য হল- কুশমণ্ডি থানার মহিশাবাথানের কাঠের তৈরি মুখোশ, গঙ্গারামপুরের তাতের শাড়ি, গঙ্গারামপুর নয়াবাজারের দধি শিল্প,পাথরডাঙ্দার নৌশিল্প,তপন থানার সেলাই শিল্প, কুমারগঞ্জ ও হিলি থানার বেদ ও বাঁশ শিল্প বিখ্যাত।
ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য সমূহঃ
দক্ষিণ দিনাজ পুর জেলার প্রত্ন তাত্ত্বিক দ্রষ্টব্য স্থান গুলির মধ্যে রয়েছে (১) বানগর, (২) চার পীলার স্তম্ব,(৩) শিব বাড়ী মিউজিয়াম,(৪) শিব বাড়ীর শিবমন্দির,(৫) একাদশ ও দ্বাদশ শতকের নিমির্ত শিব মন্দির, (৬)আতাশার দরগা,(৭) কালদিঘি,(৮) ধলদিঘি,(৯) পির পাল গ্রামের বস্তিয়ার খলজি সমাধি,(১০) নারইএ মোঘল সৈনের কবর,(১১) প্রান সাগর দিঘি ও তার সংলগ্ন শিব মন্দির,(১২) নিত পুরের জৈন ভগ্ন সমাধি মন্দির,(১৩) সর্ব মঙ্গলার বিখ্যাত চণ্ডী মন্দির,(১৪) তপন দিঘি ,(১৫) পাথর পুঞ্জ,(১৬) মহিপাল দিঘি,(১৭) নীল কুঠি।(১৮) শনী বৃক্ষ,(১৯) বিরাট রাজার গোশালা,(২০) এক ডালা দুর্গ,(২১) তেভাগা আন্দলনের স্বারক,(২২) পাকিস্থানী ট্রাঙ্ক,(২৩) বুড়ীমা কালী মন্দির,(২৪) বালুড়ঘাট কলেজ মিউজিয়াম,(২৫)সন্ধাকর নন্দীর জন্মস্থান,(২৬) পতিরাম বিদ্যেশ্বরী মন্দির,(২৭) বোল্লা কালী মন্দির,(২৮) হিলিতে ৭১ এর যুদ্ধে নিহত সৈনের স্তম্ব,(২৯)জীবৎ কুন্ডূ,,(৩০) জগদ্দল মহাবিহার।
ভূ-প্রকৃতি
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাটি মুলত সমতল হলেও সামান্য দক্ষিণে ঢালু৷ এটি বরেন্দ্র ভূমি বিস্তৃতাংশ যা পুরাতন পললমাটির দ্বারা তৈরী৷ জমি উৎকলিত নয় তথা কোনো পাহাড়ে অস্তিত্ব পাওয়া যায় না৷ জেলাটি মোটামুটিভাবে সমুদ্রতল থেকে ১৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ জেলাটি দুটি উপ-অঞ্চলে বিভক্ত যথা ক্রান্তীয় প্রকৃৃতির উত্তরের মহানন্দা সমভূমি ও দক্ষিণ-পূর্বে বালুরঘাট অঞ্চলের সমভূমি৷
বনভূমি
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বনভূমি৷ বনভূমি গুলি জেলার বিভন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে৷
কৃৃষিভূমি
নদ-নদী সমূহ জেলাটির উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত যা কৃষি উপযোগী উর্বর মৃৃত্তিকার উৎস৷ জেলাটিতে ধান ও পাট সহ তৈলবীজের চাষের প্রচলন সর্বাধিক৷
অর্থনীতি
অর্থনীতির ক্ষেত্রে জেলাটি উন্নত নয় ৷ কৃৃষিকাজই আয়ের প্রধান উৎস যেমন ইক্ষু, পাট, তৈলবীজ ইত্যাদি ৷ জেলাটিতে প্রাকৃৃতিক ও খনিজ সম্পদের ঘাটতি জেলাটির অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে ৷ বালুরঘাট শিল্পাঞ্চল ছাড়া অন্যকোনো বড়ো বা মাঝারি শিল্পাঞ্চল প্রায় নেই ফলে জেলাটি শিল্পোন্নত ও নয় ৷ কৃৃষিজ পাট ও তৈলবীজকে কেন্দ্র করে সদরগুলিতে ছোটো ও মাাঝারি শিল্প গড়ে উঠলেও তা পর্যাপ্ত নয় ৷ স্থলবন্দর হিলি ও ঐতিহাসিক স্থানের কারণে জেলাটিতে বহু পর্যটকের আগমন হয় ৷ এছাড়া ব্লকে ব্লকে পুকুর ও দীঘি থাকার দরুণ সরকারী সহযোগীতায় মৎসশিল্পে জেলাটিকে উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে ৷
কৃৃষি ও কৃৃষিজ আয় ছাড়াও জেলাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে৷ বিভিন্ন প্রত্নস্থল, প্রাচীনযুগে রাজাদের বিভিন্ন কীর্তির নিদর্শন পাওয়া যায় ৷ এছাড়াও ধর্মীয় স্থল ও প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য পর্যটনশিল্পে উন্নতিসাধন করেছে যা জেলাটির অর্থনীতির অন্যতম উৎস৷