পারমানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর (প্যান) কার্ড হল একটি ফটোসহ পরিচয়পত্র। প্রতিটি কার্ডে অক্ষর এবং সংখ্যা মিলিয়ে ১০ সংখ্যক অনন্য নম্বর থাকে। এই কার্ড ভারত সরকারের আয়কর বিভাগ দিয়ে থাকে। একে ফটো সহ পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যাঙ্ক, অন্যান্য আর্থিক কাজ-কর্মে এবং ই-টিকিট সহ ট্রেন ভ্রমণের সময় প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ যেকোনও আর্থিক লেনদেনকে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করতে প্যান কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এর পাশাপাশি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সঠিক আয়কর দিচ্ছে কিনা তা জানতেও সহায়তা করে প্যানকার্ড। এটি আয়কর ফাঁকি এবং বেআইনি আর্থিক লেনদেন রুখতে সহায়তা করে।
প্যানের ব্যবহার
নিম্নলিখিত কাজের ক্ষেত্রে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক
- আয়কর রির্টান জমা দেওয়া
- শেয়ার কেনা-বেচার জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে
- এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে ৫০,০০০ বা তার বেশি টাকা তোলা বা জমা করা বা পাঠাতে
- আয়কর ফেরতের ক্ষেত্রে
এছাড়া যেসব ক্ষেত্রে প্যানকার্ড লাগে :
- ৫ লাখ বা তার বেশি অবহণযোগ্য সম্পত্তি কেনাবেচার ক্ষেত্রে
- বাইক ছাড়া অন্যান্য গাড়ি কিনতে
- হোটেল বা রেস্টুরেন্ট এককালীন ২৫,০০০ টাকা খরচ করলে
- বিদেশে বেড়াতে গিয়ে নগদে ২৫,০০০ টাকার বেশি খরচ করলে
- বন্ড বা ডিবেঞ্চার কিনতে হলে
- মিউচ্যুয়াল ফান্ড কেনার ক্ষেত্রে
- গয়না কিনতে ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করলে
যোগ্যতা
প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রযোজন হয় না। যে কোনও ব্যক্তি, ফার্ম, যৌথ উদ্যোগ প্যান কার্ডের জন্য আবেদন জানাতে পারে। এর জন্য বয়েসের কোনও সীমা নেই। যে কোনও বয়েসেই প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
কাদের ক্ষেত্রে প্যানকার্ডের জন্য আবেদন করা বাধ্যতামূলক
যে কেউ যিনি করযুক্ত আয় করেন। যিনি বিদেশে থাকেন এবং এদেশে কর দেন
যিনি ব্যবসা করেন
প্যান কার্ডের জন্য কী কী নথি দিতে হবে
প্যান কার্ডের জন্য আবেদনের সময় সঠিক নথি জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সঠিক নথি জমা দেন না। সঠিক নথি জমা না দিলে প্যান কার্ডের আবেদন গ্রাহ্য হবে না। সেটি বাতিল হয়ে যাবে। তাই প্যান কার্ডের জন্য আবেদনের সঙ্গে জেনে নিন কী কী নথি জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে অবশ্যই নিম্নলিখিত নথি এবং ফি জমা দিন।
সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ভালো রঙিন ফটো
ফি হিসাবে ১০৫ টাকার ডিমান্ড ড্রাফ্ট/চেক
পরিচয়পত্রের ফটোকপি
ঠিকানার প্রমাণপত্রে ফটো কপি
নিম্নলিখিত নথিগুলির যে কোনও একটিকে পরিচয়ের প্রমাণ এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসাবে জমা দিন।
পরিচয়ের প্রমাণ
১. স্কুললিভিং সার্টিফিকেট
২. মাধ্যমিকের শংসাপত্র
৩. কোনও নথিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি
৪. জমা খাতের স্টেটমেন্ট
৫. ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট
৬. ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট/ব্যাঙ্কের পাসবই
৭. জলের বিল
৮. রেশন কার্ড
৯. সম্পতি করের অ্যাসেসমেন্ট অর্ডার
১০. পাসপোর্ট
১১. ভোটার পরিচয়পত্র
১২. ড্রাইভিং লাইসেন্স
১৩. সাংসদ, বিধায়ক, পুরপিতা বা কোনও গেজেটেড অফিসারের স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র
ঠিকানার প্রমাণপত্র
১. বিদ্যুৎ বিল
২. টেলিফোন বিল
৩. জমা খাতের স্টেটমেন্ট
৪. ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট
৫. ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট/ব্যাঙ্কের পাসবই
৬. বাড়ি ভাড়ার রসিদ
৭. নিয়োগকারীর শংসাপত্র
৮. পাসপোর্ট
৯. ভোটার পরিচয়পত্র
১০. সম্পতি করের অ্যাসেসমেন্ট অর্ডার
১১. ড্রাইভিং লাইসেন্স
১২. রেশন কার্ড
১৩. সাংসদ, বিধায়ক, পুরপিতা বা কোনও গেজেটেড অফিসারের স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র
বিঃদ্রঃ ঠিকানার প্রমাণ হিসাবে জমা দেওয়া নথির মধ্যে ক্রমিক নং ১ থেকে ৭ পর্যন্ত যেন আবেদনের দিন থেকে ছ’মাসের বেশি পুরনো না হয়।
প্যান কার্ডের জন্য প্রদেয় ফি এবং জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া
সাধারণভাবে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকরণের ফি পরিষেবা কর সহ ১০৫ টাকা। কার্ডের জন্য নির্দিষ্ট ফি এবং তা জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়া মেনেই ফি জমা দিতে হবে।
প্যান কার্ড আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য ফি ১০৫ টাকা (৯৩.০০ + ১২.৩৬% পরিষেবা কর)
নিম্নের মাধ্যমগুলির সাহায্যে ফি জমা দেওয়া যেতে পারে
ডিমান্ড ড্রাফ্ট
চেক
ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড
নেট ব্যাকিং
ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়ার জন্য
ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পালন করতে হবে।
ডিমান্ড ড্রাফট/চেক দিতে হবে ‘এনএসডিএল-প্যান’-এর নামে
ডিমান্ড ড্রাফট প্রদেয় হবে মুম্বইয়ে এবং নাম ও স্বীকৃতি প্রদানকারী সংখ্যা লেখা থাকবে চেকের পেছনে।
চেকের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া
চেকের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে।
যিনি চেকের মাধ্যমে আবেদনের ফি জমা দেবেন তাকে স্থানীয় চেক কেটে দেশের মধ্যে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের যে কোনও শাখায় জমা দিতে হবে (দাহেজ ছাড়া)।
চেকের পেছনে নাম ও স্বীকৃতি প্রদানকারী সংখ্যা লেখা থাকবে।
জমা দেওয়ার স্লিপে এনএসডিএলপিএন লিখে দিতে হবে।
এই পদ্ধতিগুলি না মানলে আবেদনটি বাতিল হয়ে যাবে।
বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে
বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিও এদেশে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে কোনও ব্যক্তির যদি দেশের বাইরে যোগাযোগের ঠিকানা হয় তবে তার প্যান কার্ডের জন্য আবেদনের ফি আলাদা। বিদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের প্যান কার্ডের জন্য ফি ৯৭১ টাকা (আবেদনের ফি ৯৩.০০টাকা + জমা দেওয়ার খরচ ৭৭১.০০টাকা + ১২.৩৬% পরিষেবা কর)। ক্রেডিট কার্ড বা নেট ব্যাকিং-এর মাধ্যমে এই ফি জমা দেওয়া যেতে পারে।
তবে, বর্তমানে ভারতের বাইরে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে প্যান কার্ড পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। সেই দেশগুলির তালিকার লিঙ্ক দেওয়া হল https://tin.tin.nsdl.com/pan/Country.html
সোর্স- বিকাশপেডিয়া