মা মনসা দেবীঃ মনসা-লৌকিক দেবী হিসেবে খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাঁর প্রচলন পরবর্তীতে পৌরাণিক দেবী হিসেবেও খ্যাত ।
শ্রী শ্রী মা মনসা দেবী এর পরিচয় ও তার পুজার ইতিহাস
পদ্মপুরাণ,দেবীভাগবত পুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণসহ কয়েকটি উপপুরাণে এই দেবীর উল্লেখ রয়েছে।তবে ইতিহাসবেত্তাদের মতে,মনসা দেবীর বর্তমান মূর্তিরূপে পূজার প্রচলন ঘটে দশম-একাদশ শতকে ।সাধারণত সর্পকুলের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে প্রচলিত হলেও তাঁকে কৃষির দেবীও বলা হয়।পুরাণ মতে,মনসা জরত্কারু মুনির পত্মী,আস্তিকের মাতা এবং বাসুকির ভগিনী । ব্রহ্মার উপদেশে ঋষি বশিষ্ঠ সর্পমন্ত্রের সৃষ্টি করেন এবং তাঁর তপস্যার দ্বারা মন থেকে অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে মনসার আবির্ভাব ঘটে। মন থেকে সাকার রূপ লাভ করেছেন বলে এর নাম হয়েছে মনসা । মনসাকে আবার শিব দুহিতা রূপেও কল্পনা করা হয়। মনসার অপর নাম কেতকা , বিষহরি, পদ্মাবতী প্রভৃতি।
এটিও পড়ুন – 2021 থেকে ২০৫০ মা মনসা পূজার তারিখ ও সময়, মনসা পুজার ক্যালেন্ডার – Manasa Puja Date
মা মনসা দেবী এর পুজা
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার পর যে পঞ্চমী তিথি (শ্রাবণ)তাকে নাগপঞ্চমী বলে। নাগপঞ্চমীতে উঠানে সিজগাছ স্থাপন করে মনসা পূজা করা হয়। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী পর্যন্ত পূজা করার বিধান আছে।বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একমাস যাবত্ পূজা করে পূজাসমাপনান্তে বিশেষভাবে পুজো করা হয় অথবা শুধুমাত্র শেষ দিনে পুরোহিত দ্বারা পূজা করা হয়।উল্লেখ্য, নাগকুল কশ্যপমুনির জাত যা সাধারণ সাপ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন যেমনঃ অনন্ত , শিষ , বাসুকি প্রভৃতি উদাহরণস্বরূপ বিষ্ণুর মস্তকের উপরে থাকে শিষ নাগ ।
বাংলা সাহিত্যে মা মনসা দেবীঃ
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধে কানা হরি দত্ত রচিত মনসা মঙ্গল,নারায়নদেবের পদ্মপুরাণ,বিপ্রদাস বিপলাই রচিত মনসা বিজয় ,কেতাকদাস , ক্ষেমানন্দ প্রমুখসহ পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের)প্রায় বাইশ জন কবি রচিত মনসাকে নিয়ে মঙ্গলকাব্য ও পালাগান তত্কালীন বাংলার আর্থ -সামাজিক প্রতিচ্ছবিকে প্রকাশ করে।
*পরিশেষঃ
ভগবান গীতায় ১০ম অধ্যায়ের ২৮-২৯ শ্লোকে বলেছেন ,সর্পের মধ্যে বাসুকি,নাগের মধ্যে তিনি অনন্ত। আবার,তিনি খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, আকাশ যেমন সবকিছুকে আচ্ছাদিত করে থাকলেও কোন কিছুর সাথে লেগে নেই তেমনি সবকিছুর শক্তি তাঁর ই অথচ তিনি কোনকিছুর সাথে জড়িত নন দেবী মনসার পুজো কালক্রমে বাঙালি সনাতনী সংস্কৃতির অংশ
হয়ে দাঁড়িয়েছে।কেরালা,তামিলনাড়ুসহ দক্ষিণভারতে,নেপালের কাঠমুন্ডুতে আজ নাগপঞ্চমী অন্যতম প্রধান উৎসব।বাংলাদেশে দিনাজপুর,বরিশাল সহ অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের পল্লীতেও গড়ে উঠেছে অনেক মনসা দেবীর মন্দির।এমনকি বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনেও দেওয়া হয়েছে মনসা দেবীকে বিশেষ মর্যাদা । ভগবান গীতায় বলেছেন , “যে যথা মাং প্রপদ্যন্ত…পার্থ সর্বশঃ ॥”(৪/১১)
আবার,ভগবান গীতার ৭ম অধ্যায়ের ২১-২২ নং শ্লোকে বলেছেন, “যে যে ভক্ত যেই যেই দেবতাকে পূজা করিতে চায়,সেই দেবতাকে পূজা করিবার অচলা ভক্তি আমি তাকে দিয়া থাকি।সেই ভক্ত ভক্তির সহিত সেই দেবতাকে পুঁজিয়াই ইষ্টলাভ করে।”