মা শীতলা কে? শীতলা পূজা করলে কী হয়? জেনে নিন বিস্তারিত

মা শীতলাঃ
তিনি মহামায়ার একটি রুপ। তিনি এই রুপে পীড়ির হরণ করেন। জগতবাসীর পীড়া হরণ করবার জন্য আদিশক্তি ভগবতী শীতলা রুপ ধারন করেছে। মা শীতলাকে অনেকে বসন্ত রোগের বাহক মনে করেন ও মা শীতলার নাম শুনলে ভয় পান। সেই লোকেদের বিশ্বাস মা শীতলা পূজা পাবার জন্য রোগ দান করেন। সেই সমস্ত লোকগুলো নিতান্তই মূর্খ। মা কোনো দিন সন্তান কে রোগ দেন না আর মা পূজার ভিখারী ও নন। মা হলেন স্বয়ং অন্নপূর্ন। মা ধান দেন আমরা খাই। সুতরাং মায়ের কোনো কিছু অভাব নেই। আমরা মায়ের জিনিস মাকেই অর্পন করি। মা রোগ দিতে নয়, হরণ করতে আসেন। মা শীতলা ঝাঁটা, শূর্প ধারন করেন। ঝাঁটা শূর্প অর্থাত কুলো দ্বারা আমরা ময়লা ঝারি। মা রোগ তাড়ান তাই তিনি প্রতীক রুপ ঝাঁটা শূপ ধারন করেন। মায়ের হাতে অমৃত কুম্ভ থাকে। সেই শান্তিবাড়ি দিয়ে সর্বত্র শান্ত করেন। মা শীতলার হাতে পাখা থাকে। পাখার দ্বারা তিনি শীতল করেন, তাই তিনি মা শীতলা। মা শীতলার বাহন গর্দভ। গর্দভকে আমরা বোকা বললেও আসলে সে চুপচাপ ভাবে কাজ করেন মালিকের। গর্দভ আমাদের নিস্কাম কর্ম, নিঃস্বার্থ শেখায়। চিকিতসায় গর্দভীর দুধ দিয়ে বসন্ত রোগের প্রতিষেধক বানানো হয়। তাই মায়ের বাহন গর্দভ। মাকে দেখে কোনরুপ ভীত হবার কারন নেই। মায়ের নাম শীতলা। মায়ের নাম স্বরন করলে রোগ নাশ হয়। মায়ের কাছে আমরা আয়ু,আরোগ্য,বল,যশ,পার্থনা করব।

শীতলা মায়ের নাম এবং রূপগুলি

শীতলার আক্ষরিক অর্থ সংস্কৃততে “শীতল হওয়া”। শীতলাকে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। শীতলাকে প্রায়শই মা ও মাতা (‘মা’) বলা হয় এবং হিন্দু, বৌদ্ধ এবং উপজাতি সম্প্রদায় তাঁর উপাসনা করে। তান্ত্রিক ও পুরাণ সাহিত্যে তাঁর উল্লেখ রয়েছে এবংপরবর্তী ভাষাগত গ্রন্থ (যেমন সতেরো শতকের বাঙালি সাহিত্য ‘শীতলা-মঙ্গল-কাব্য’, মানিকরাম গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘শুভ কবিতা’) তাঁর মর্যাদার অক্ষুণ্ণতা বজায় রাখতে অবদান আছে।

শীতলা উত্তর ভারতের অঞ্চলে ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে শিবের সঙ্গী পার্বতী বলে চিহ্নিত করা হয়। শীতলাকে মাতা, মরশুমি দেবী (বসন্ত) হিসাবে সম্বোধন করা হয় এবং ঠাকুরানী, জগৎরানী (‘বিশ্বের রাণী’), করুণাময়ী (‘যিনি করুণায় পূর্ণ’), মঙ্গলা (‘শুভ’), ভগবতী (‘দেবী’), দয়াময়ী (‘যিনি দয়া ও করুণায় পূর্ণ’) নামে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ ভারতে দেবী শীতলার ভূমিকাটি অবতার মারিয়ম্মান বা মারিয়াত্থা নিয়েছেন, যাকে দ্রাবিড় ভাষী লোকেরা উপাসনা করেন।

হরিয়ানা রাজ্যের গুড়গাঁওয়ে শীতলাকে কৃপী (গুরু দ্রোণাচার্যের স্ত্রী) বলে মনে করা হয় এবং গুড়গাঁওয়ের শীতলা মাতা মন্দিরে পূজা করা হয়।

শীতলা পূজা

শীতলা পূজা ব্রাহ্মণ ও পূজারী উভয়ই পরিচালনা করেন। শীত ও বসন্তের শুকনো মরসুমে শীতলা অষ্টমী নামে খ্যাত এই দিনটিতে প্রধানত তাঁর পূজা হয়।

তবে পুরোবাংলায় শুধু ফাল্গুন নয় চৈত্র মাসেও মঙ্গলবার, শনিবার শীতলা পূজা হয়।হাওড়ার শ্যামপুরের শিবগঞ্জ গ্রাম ও কলকাতার বেলেগাছার শ্রী শ্রী শীতলা মন্দিরে সারা চৈত্র মাস ধুমধাম করে পূজা হয়[২]।হুগলী জেলার খানাকুল থানার রঞ্জিৎবাটী কেটেদল গ্রামের শীতলা ও মনসা মাতা মন্দিরের পূজা প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো ।শীতলা মায়ের পূজা তিন দিন ধরে চলে মায়ের মন্দিরে,এই পুজোর আগের দিনে মায়ের জাগরন গান হয়,তার পরের দিন রুপনারায়ন নদী থেকে জল এনে শীতলা মায়ের মন্দিরে ঢালা হয়,এরপর হয় দণ্ডী কাটা,মায়ের আরতি হয়,ধুনো পুরানো মাধ্যম দিয়ে চলে শীতলা মায়ের পূজা,শীতলা মায়ের পূজা গোটা গ্রামের নিয়ে শুরু হয়,এবং পূজা দেখার জন্য বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা সমাগম হয় মায়ের মন্দিরে।দক্ষিণ সুন্দরবনের শীতলা মন্দির বা কাঁকড়া মায়ের মন্দিরে সাত দিন ধরে মা শীতলার পূজা হয়।এ সময় মেলা বসে।মায়ের ভোগে দেয়া হয় কাঁকড়া,মাছ,সবজি।এ মন্দিরে সপ্তাহে দু দিন মার পূজা হয় [৩]।

মা শীতলার পুজোর জন্য অনেক আরতি সংগ্রহ ও স্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলেন শ্রী শীতলা মাতার চল্লিশা, শীতলা মায়ের আরতি এবং শ্রী শীতলা মাতা অষ্টক। সোর্স – উইকিপিডিয়া

শীতলা মায়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির:

শীতলা মাতার জন্মস্থান মাগ্ধা, বিহার শরীফ, নালন্দা
শীতলা মাতা মন্দির, ময়নপুরী, উত্তর প্রদেশ
শীতলা মাতা মন্দির, মিরুত, উত্তর প্রদেশ
শীতলা চৌকিয়া ধাম মন্দির, জৌনপুর
শীতলা মাতার মন্দির, খন্দ, সোনিপাট
মা শীতলা মাকারা ধাম, জৌনপুর
শীতলা মাতা মন্দির, জালোর, রাজস্থান
শীতলা মাতার মন্দির, রাজস্থান এর রেঙ্গাস
শীতলা মাতার মন্দির , বাঁধাঘাট, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ
বড়,মেজ,সেজ ও ছোট শীতলা মায়ের মন্দির, সালকিয়া,উত্তর হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ[২]
শীতলা ও মনসা মাতা মন্দির,রঞ্জিৎবাটী কেটেদল গ্রাম,হুগলী,পশ্চিমবঙ্গ
শ্রীশ্রীশীতলা মন্দির,বেল্গাছিয়া,কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ
শীতলা মাতা মন্দির, গড়িয়া, কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ
শীতলা মন্দির বা কাঁকড়া মায়ের মন্দির, দক্ষিণ সুন্দরবন,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,পশ্চিমবঙ্গ
শীতলা মাতা মন্দির, উনা, হিমাচল প্রদেশ
শীতলা মাতা মন্দির, পালামপুর, হিমাচল প্রদেশ
হারুলংগফের শীতলবাড়ি, লুমডিং, নাগাঁও, আসাম
শীতলা মাতা মন্দির, যোধপুর, রাজস্থান
শীতলা মাতা মন্দির, কাউশম্ভী, উত্তর প্রদেশ
শীতলা মাতা মন্দির, নিজামবাদ, আজমগড়, উত্তর প্রদেশ
শীতলা মাতা মন্দির, বার্মার, রাজস্থান
শীতলা মাতা মন্দির, বিদলান, সোনিপাট
শীতলা দেবী মন্দির, গুড়গাঁও
শীতলা মা মন্দির, সমতা
শীতলা মা মন্দির মান্ড, মন্ডলা, মধ্য প্রদেশ

ট্যাগঃ মা শীতলার বাহন কোন প্রাণী, মা শীতলা সাউন্ড, শীতলা পূজা 2020, শীতলা পূজা ২০২০, শীতলার প্রনাম মন্ত্র, জ্বরাসুর, শীতলা মঙ্গল pdf

Leave a Reply