You are currently viewing মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর 100+

মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর 100+

মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর: মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ। পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট খনিজ পদার্থ এবং জৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়। জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে ভূমিক্ষয় আবহবিকার, বিচূর্ণিভবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাথর থেকে মাটির উদ্ভব হয়েছে। নিম্নে মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হল।

মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

Q.  মৃত্তিকা কাকে বলে?

Ans.: ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের ক্ষয়ে যাওয়া ও বিকৃত হওয়া শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত নরম স্তরকে মৃত্তিকা বলা হয়।

Q.  মৃত্তিকা সৃষ্টির পেছনে কি কি ভৌত প্রক্রিয়া আছে?

Ans.: বিচূর্ণীভবন, নগ্নীভবন, ভূক্ষয়, অপসারণ, অবক্ষেপণ ইত্যাদি ভৌত প্রক্রিয়া মৃত্তিকা সৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে।

Q.  মৃত্তিকার উপাদান কি কি?

Ans.: → মৃত্তিকার উপাদানগুলি হল—(i) মৃত্তিকার কণা, (ii) খনিজ পদার্থ, (iii) জৈব পদার্থ বা হিউমাস, (iv) মৃত্তিকাস্থিত জীব, (v) জল ও (vi) বাতাস।

Q.  স্থিতিশীল মৃত্তিকা কি?

Ans. : প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে খনিজ শিলা থেকে যে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় তা যদি উৎপত্তিস্থলেই স্থিতিলাভ করে, তবে তাকে স্থিতিশীল মৃত্তিকা বলে।

Q. স্থানান্তরিত মৃত্তিকা কি?

Ans.: প্রাকৃতিক দুর্যোগে অর্থাৎ প্রচণ্ড বায়ুপ্রবাহে নদীস্রোতে বা প্রবল বর্ষণে যখন শিলাচূর্ণ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে সঞ্চিত হয়, তখন তাকে স্থানান্তরিত মৃত্তিকা বলে।

Q. গঠন অনুযায়ী মৃত্তিকা কত প্রকারের?

Ans.: গঠন অনুযায়ী মৃত্তিকা তিন প্রকারের এঁটেল, বেলে ও দোআঁশ মৃত্তিকা।

Q.  মৃত্তিকা কিভাবে সৃষ্টি হয়?

Ans. প্রাকৃতিক শিলা বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক ক্রিয়ায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।

Q.  পলি মাটি ও লোয়েস বলতে কি বোঝ?

Ans. যে মাটি জলস্রোত দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র সঞ্চিত হয়, তাকে পলি মাটি বলে। আর, বাতাস দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র সঞ্চিত মাটিকে লোয়েস বলে।

Q.  মাটির জীব কারা?

Ans.: মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন জীব হল–প্রোটোজোয়া, ব্যাক্টিরিয়া, ছত্রাক, শৈবাল, কেঁচো, বিভিন্ন সন্ধিপদ প্রাণী ইত্যাদি।

Q. মাটির কণা কত প্রকারের ও কি কি?

Ans.: মাটির কণা চার প্রকারের, যেমন কাকর, বালি, কাদা ও পলি।

Q. মাটি সৃষ্টিতে সহায়ক কয়েকটি প্রাণীর নাম উল্লেখ কর।

Ans.: মাটি সৃষ্টিতে সহায়ক কয়েকটি প্রাণী হল— কেঁচো, পিঁপড়ে, কোলেমবোলা, ইঁদুর ইত্যাদি৷

Q. অবক্ষেপণ বলতে কি বোঝ?

Ans. : → যে প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি ঝড়, বৃষ্টি, নদ-নদীর দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র কোথাও জমা হয়ে মৃত্তিকা সৃষ্টি করে, তাকে অবক্ষেপণ বলে।

Q.  বিচূর্ণীভবন কাকে বলে?

Ans. দিবারাত্র তাপের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে যে প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের শিলার প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আলগা হয়, তাকে বিচূর্ণীভবন বলে।

Q. নগ্নীভবন কাকে বলে?

Ans:  বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ভূপৃষ্ঠ ক্রমশ ক্ষয়িত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নগ্ন হয়, তাকে নগ্নীভবন বলে।

Q. ভূক্ষয় কি?

Ans.: যে প্রক্রিয়ায় কতকগুলি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটিতে রূপান্তরিত হয়, তাকে ভূক্ষয় বলে।

Q. অবসারণ বলতে কি বোঝ?

Ans. যে প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি এক স্থান থেকে অন্যত্র বাহিত হয়, তাকে অবসারণ বলে।

Q. মাটিতে উপস্থিত কয়েকটি খনিজ পদার্থের নাম লেখ।

Ans. মাটিতে উপস্থিত কয়েকটি খনিজ পদার্থের নাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, লোহা, তামা, দস্তা ইত্যাদি।

Q.  এই খনিজ পদার্থগুলি সাধারণত কিরূপে থাকে?

Ans.: মাটিতে উপস্থিত খনিজ পদার্থগুলি সাধারণত অজৈব লবণ হিসাবে থাকে। যেমন নাইট্রেট, সালফেট, ফসফেট ইত্যাদি।

Q. মাটির জল কত প্রকারের ও কি কি ?

Ans. মাটির জল চার প্রকারের। যেমন— মহাকর্ষীয় এবং সংযুক্ত জল জল, কৈশিক জ্বল, জলাকর্ষী জল ।

Q. মহাকর্ষীয় জল বলতে কি বোঝ?

Ans: বৃষ্টিপাতের পর যে জল মহাকর্ষের টানে মাটির নীচে সঞ্চিত হয়, তাকে মহাকর্ষীয় জল বলে।

Q. কৈশিক জল কাকে বলে?

Ans. মাটির কণার আশেপাশে যে জল থাকে এবং উদ্ভিদ যে জল শোষণ করে, তাকে কৈশিক জল বলে।

Q. জনাকর্ষী জল কাকে বলে?

Ans.: সবসময় প্রচুর বাষ্পীভবন হওয়া সত্ত্বেও যে অল্প পরিমাণ জল মাটির কণার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংলগ্ন থাকে এবং যে জল গাছ শোষণ করতে পারে না, তাকে জলাকর্মী জল বলে।

Q. সংযুক্ত জল কি?

Ans. যে জল রাসায়নিক পদার্থ ও মাটির কণার সঙ্গে সংলগ্ন থাকে, তাকে সংযুক্ত জল বলে। বিভিন্ন যৌগের কেলাসের মধ্যে এই জল থাকে।

Q. হিউমাস বা বোদ কি?

Ans. বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা মৃত্তিকাস্থিত উদ্ভিদকলা পরিবর্তিত হয়ে যে বাদামী রং-এর জটিল পদার্থের সৃষ্টি করে, তাকে হিউমাস বা বোদ বলে।

Q. বেলে মাটির বৈশিষ্ট্য কি?

Ans.: এই মাটি আলগা ধরনের। এর জলধারণ ক্ষমতা কম। এতে প্রচুর বায়ু চলাচল করে। এর উর্বরাশক্তি কম।

Q. বেলে মাটিতে কোন প্রকার ফসল ভাল জন্মায়?

Ans.: বেলে মাটিতে ফুটি, তরমুজ, পটল ইত্যাদি ভাল জন্মায়।

Q. এঁটেল মাটির বৈশিষ্ট্য কি?

Ans. এর জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। এতে বায়ু চলাচল খুব ভালভাবে হয় না। এর জলনিকাশ ক্ষমতা খুব কম। শুকিয়ে গেলে এই মাটি ফেটে যায়।

Q. এঁটেল মাটিতে কোন কোন ফসল ভাল জন্মায়?

Ans.: এঁটেল মাটিতে কোন ফসলই ভাল জন্মায় না, তবে ধান, গম, যব ইত্যাদি মোটামুটিভাবে উৎপাদন করা যায়।

Q. দোআঁশ মাটির বৈশিষ্ট্য কি?

Ans.: এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা, জলশোষণ ক্ষমতা, বায়ু চলাচল ক্ষমতা প্রভৃতি মাঝারি ধরনের। ফলে এই মাটি খুব ঊর্বর প্রকৃতির হয়।

Q. দোআঁশ মাটিতে কোন্ কোন্ ফসল ভাল জন্মায়?

Ans. দোআঁশ মাটিতে সব রকমের ফসল ভাল জন্মায়, বিশেষত ধান, গম, আলু, আখ ইত্যাদি।

Q. হিউমাস কোথায় পাওয়া যায় এবং এতে কি কি ফসল ভাল জন্মায়?

Ans. হিউমাস অসম, দার্জিলিং অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই মাটিতে চা ভাল জন্মায়।

Q. হিউমাসের বৈশিষ্ট্য কি?

Ans. হিউমাস মাটি অম্লধর্মী এবং এর জলধারণ ক্ষমতা বেশি ও বায়ু চলাচল ক্ষমতা স্বাভাবিক।

Q. হিউমাসের প্রয়োজনীয়তা কি?

Ans:  হিউমাস মাটির জলধারণ ক্ষমতা ও সচ্ছিদ্রতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, হিউমাসের উপস্থিতি জীবাণুদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

Q. নোনা মাটি কি? এই মাটি কোথায় পাওয়া যায় এবং এতে কোন কোন উদ্ভিদ ভাল জন্মায়?

Ans.: → যে মাটিতে লবণের ভাগ বেশি থাকে তাকে নোনা মাটি বলে। এই মাটি সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল সুন্দরবনে পাওয়া যায়। এই মাটিতে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, নারকেল প্রভৃতি উদ্ভিদ ভাল জন্মায়।

Q. বোদ কিভাবে গঠিত হয়?

Ans.: মাটিতে বিভিন্ন জৈব পদার্থ মেশার পর তার কিছু অংশ (যেমন প্রোটিন, স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি) বিভিন্ন ধরনের মৃতজীবী জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয়। আবার কিছু কিছু অংশ (যেমন—মোম, লিগনিন, রজন প্রভৃতি) অবিয়োজিত অবস্থায় থেকে যায়। জৈব পদার্থের এই অবিয়োজিত অংশই হল হিউমাস বা বোদ।

Q. হিউমাসের বিভিন্ন উপাদান কি কি?

Ans. হিউমাসের বিভিন্ন উপাদান হল -(i) লিগনোপ্রোটিন, (ii) ক্লে-প্রোটি), (ii) পলিইউরোনাইডস।

Q. শারীরবৃত্তীয় শুদ্ধ মৃত্তিকা কাকে বলে? এই মৃত্তিকা কোথায় পাওয়া যায়?

Ans. যে মৃত্তিকায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকা সত্ত্বেও খনিজ লবণ বেশি থাকার দরুন সাধারণ উদ্ভিদ ঐ জল শোষণ করতে অক্ষম, সেই ধরনের মৃত্তিকাকে শারীরবৃত্তীয় শুদ্ধ মৃত্তিকা বলে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়।

Q. মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জীবাণুর কি ভূমিকা আছে?

Ans.: মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার ব্যাক্টিরিয়া, যেমন-অ্যাজোটোব্যাক্টর, ক্লসট্রিডিয়াম: ব্লু-গ্রিন শৈবাল, যেমন— নস্টক, বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে এবং তা মাটিতে মিশিয়ে দেয়। ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও মাটির উর্বরাশক্তি বেড়ে যায়।

Q. মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা কি?

Ans. কেঁচো একদিককার মাটি অন্য দিকে এবং অন্যদিককার মাটি আর এক দিকে সরিয়ে মাটিকে আলগা করে দেয়। ফলে মাটির ভেতর বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মাটি উর্বর হয়।

Q. কেঁচোকে ‘চাষীর বন্ধু’ বলা হয় কেন?

Ans.: কেঁচো মাটি আলগা করে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং এইভাবে চাষীকে চাষ আবাদে সাহায্য করে। এই কারণে কেঁচোকে ‘চাষীর বন্ধু’ বলা হয়।

Q. লবণাক্ত মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি বলে কেন?

Ans. লোনা মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকার জন্য উদ্ভিদ জল শোষণ করতে পারে না, তাই লোনা মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি বলে।

Q. বোদ মৃত্তিকা সাধারণ ফসল চাষের উপযোগী নয় কেন?

Ans.: বোদ মৃত্তিকা অম্লধর্মী। এতে জল বেশি দাঁড়ায়। এর বালি ও কাদার ভাগ সুমনয়। এর জন্যই বোদ মৃত্তিকা সাধারণ ফসল চাষের উপযোগী নয়।

Q. দোআঁশ মাটি সাধারণভাবে ফসল চাষের উপযোগী কেন?

Ans.: এই মাটিতে কাদা, বালি ও পলির পরিমাণ উপযুক্তভাবে থাকে। এর জলধারণ ক্ষমতা ও বায়ু চলাচল ক্ষমতা স্বাভাবিক হওয়ার জন্য এই মাটি উর্বর প্রকৃতির হয়। এই কারণেই দোআঁশ মাটি ফসল চাষের উপযোগী।

এটিও পড়ুন – ভারতের মাটি সম্পর্কিত জানা অজানা প্রশ্ন উত্তর

ট্যাগঃ মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন, মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর, মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর PDF, জেনে নিন মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর, Download মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন, Free Download PDF মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন, ১০০ + মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর। ভূগোলের মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন। মৃত্তিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন QA

Leave a Reply